রহমত নিউজ 07 October, 2023 08:50 PM
‘দিল্লি থাকলে আমরাও আছি’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য প্রমাণ করে তারা আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়। অথচ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। এ দেশ স্বাধীন করতে লাখো মা-বোন তাদের ইজ্জত হারাতে হয়েছে। অনেক মা তার বুক খালি করেছে। অনেক বোন হয়েছে বিধবা। অনেক সন্তান হয়েছে বাবা হারিয়ে এতিম। আত্মত্যাগে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতা আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ধ্বংস করবে এটি এদেশের মানুষ বরদাশত করবে না। মানুষ স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজনে আবার রাজপথে নেমে আসবে। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরে বক্তব্য সুস্পষ্ট রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলে দেশ ধ্বংস করে ফেলবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মানুষের বাকস্বাধীনতার টুটি চেপে ধরবে।
চরমোনাই পীর বলেন, ওবায়দুল কাদের বলছেন, তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে। আমি বলি তলে তলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ সরকারের পতন আন্দোলনে তৈরি হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চরমোনাই পীর বলেন, ছলচাতুরির আশ্রয় না নিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। অন্যথায় দেশের জনগণ আপনাদেরকে চরম শিক্ষা দেবে।
আজ শনিবার বিকেলে পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে চলতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (চজ) পদ্ধতির প্রবর্তন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অবহেলা ও চরম অব্যবস্থাপনা নিরসন, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, ইসলামী আইনজীবী পরিষদের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়া, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদার, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, ডা. শহিদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা মাকসুদুর রহমান, ফজলুল হক মৃধা, এম এম শোয়াইব, মুফতি আখতারুজ্জামান, হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানিয়া, আল-আমিন সোহাগ, ইউসুফ পিয়াস, আবদুর রহমান প্রমুখ।
মুফতী রেজাউল করীম আরও বলেন, দেশে কর্তৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার দিনের ভোট রাতে করে স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। তিনি বলেন, সরকার জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হত্যা করেছে। দেশের নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না।
তিনি বলেন, দেশ আমাদের, নির্বাচনও আমাদের। সুতরাং আমার দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কিভাবে হবে? এখানে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। বিদেশীদের প্রেসক্রিপশনে রাষ্ট্র ও নির্বাচন পরিচালিত হবে না। দেশের মানুষ নানা সঙ্কট ভোগ করছে। নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত।
চরমোনাই পীর বলেন, জাতীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে। সঙ্কট আরো ঘুণিভূত হচ্ছে। সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ন্যায় কলঙ্কিত নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। তিনি বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। তারাই বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল ও অবরোধ করেছে, ৫ শতাধিক মানুষ হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, সিন্ডিকেট বন্ধ করে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিরীহ নিরাপরাধ জনগণ, আলেম-ওলামাদের হয়রানী বন্ধ করতে হবে। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। দুর্নীতি, ঘুষ, চুরি-ডাকাতির উন্নয়ন হয়েছে। সর্বত্র ঘুষ ও দুর্নীতিতে সয়লাব।
মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যা বলে তা করে না, যা করে তা বলে না’। সরকার দ্রব্যমূল্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। খোদ বাণিজ্যমন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বেশি বললে দেশের সবকিছু বন্ধ করে দিবো। তাহলে আওয়ামী লীগ দেশের মালিক? আর দেশের ১৮ কোটি মানুষ ভেসে আসছে?, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতির সাথে জড়িত। অর্থ লুট-পাট, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। তারা উন্নয়নের নামে নিজেদের উন্নয়ন করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী! সময় থাকতে পদত্যাগ করুন। না হলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।